ক্লাউড কম্পিউটিং কী? ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধাসমূহ

5/5 - (1 vote)

ক্লাউড শব্দের বাংলা অর্থ মেঘ। তাহলে ক্লাউড কম্পিউটিং মেঘ বা মেঘে কম্পিউটিং সম্পর্কিত কিছু? আসলে ক্লাউড কম্পিউটিং বিষয়টি এরকম না, আবার কিছুটা এরকমই।মনে করেন, আপনার একটা প্রতিষ্ঠান আছে এবং সেখানকার কর্মীদের ডেটাগুলো আপনি একটি কম্পিউটারের সংরক্ষণ করেন। এছাড়াও ব্যবসায় সংক্রান্ত নানা রকম তথ্য-উপাত্ত আপনাকে কাজের প্রয়োজনে সংরক্ষণ করতে হয়। আচ্ছা কোনো কারণে যদি আপনার কম্পিউটারের হার্ডডিস্কটি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আপনার এতসব গুরুত্বপূর্ণ ডেটা কীভাবে ফিরে পাবেন? [ক্লাউড কম্পিউটিং কী]

অথবা মনে করুন, আপনি বাসার বাইরে কোথায় বেড়াতে গেলেন। সেখানে গিয়ে জরুরি কাজে আপনার একটা ফাইল প্রয়োজন, কিন্তু আপনি যেই কম্পিউটারে বা ল্যাপটপে উক্ত ফাইলটি রেখেছিলেন সেটা সাথে নিয়ে যান নি। তাহলে উক্ত ফাইলটি সেই মূহুর্তে কীভাবে পাবেন?

অথবা মনে করুন, আপনার সে কম্পিউটার বা ল্যাপটপটি আছে সেটার ক্ষমতা কম বা সেখানে আপনার লাগবে এমন একটা সফটয়্যার নেই। তাহলে কি আপনার কম্পিউটারে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন কোন কাজ করতে পারবেন না বা যে সফটয়্যারটি আপনার প্রয়োজন সেটি ব্যবহার করতে পারবেন না?

এতক্ষণ আপনার কাছে কেন এতগুলো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম জানেন? উপরের যে সমস্যাগুলো দেখালাম এই সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্যই মূলত ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ধারণার উদ্ভব হয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য চলুন আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে নেয়। এই আর্টিকেলে আমরা জানতে পারবো, ক্লাউড কম্পিউটিং কী, ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা কী কী এবং ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে বিস্তারিত।

ক্লাউড কম্পিউটিং কী?

ক্লাউড কম্পিউটিং হলো ভার্চুয়াল কম্পিউটিং ব্যবস্থা। আরেকটু সহজভাবে বলতে গেলে, ক্লাউড কম্পিউটিং হচ্ছে কম্পিউটার রিসোর্সগুলো (হার্ডও্যার ও সফটয়্যার) ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করা। এখানে আপনি সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে কম্পিউটারের অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন কোনো হার্ডও্যার বা সফটয়্যার আপনার কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারবেন। হার্ডওয়্যারটি সরাসরি আপনার কম্পিউটারে লাগানো হবে না বা সফট্যারটি সরাসরি আপনার কম্পিউটারে ইনস্টল হবে না, কিন্তু আপনি এগুলোর সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস পাবেন।

এছাড়াও ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে আপনি ক্লাউড স্টোরেজ ভাড়া করতে পারবেন। আর ক্লাউড স্টোরেজ বলতে বুঝায় ইন্টারনেটে এমন একধরনের তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা যেখানে আপনার তথ্য থাকবে সুরক্ষিত, হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হওয়ার সভাবণা প্রায় শূণ্য। এবিষয়ে আমরা আরো জানবো নিচের অংশে।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা

ক্লাউড কম্পিউটিং এর বেশ অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলোর কারণে ক্লাউড কম্পিউটিং প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হচ্ছে। ক্লাউড কম্পিউটিং এর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো

অন ডিমান্ড সার্ভিসঃ ক্লাউড কম্পিউটিং এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা হলো এতে ক্রেতা তার ইচ্ছেমতো সেবার পরিমান, সময় ইত্যাদি বাড়াতে বা কমাতে পারে। আপনি যেকোনো সময় এগুলো আপনার নিজের চাহিদা মোতাবেক পরিবর্তন করতে পারবেন।

আপগ্রেডেবলঃ ব্যবহারকারী তার ইচ্ছে ও চাহিদা মোতাবেক ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার, সফটও্যার ও স্টোরেজ ইত্যাদি যখন-তখন আপগ্রেড করতে পারে, এমনকি প্রয়োজনে এগুলো ডাউনগ্রেডও করতে পারবে।

যেমন খরচ তেমন পরিশোধঃ ক্লাউড কম্পিউটিং এর অন্যতম বড় ও সেরা বৈশিষ্ট্য হলো আপনি যতটুকু সেবা গ্রহণ করেছেন আপনাকে ঠিক ততটুকুর টাকাই পরিশোধ করতে হবে। এটা মোবাইলে ডেটা শেষ হয়ে গেলে যেমন pay-as you go সার্ভিস আমরা পায় ঠিক তার মতো।

অপারেটিং খরচ তুলনামূলক কম হয় ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিস গ্রহণ করলে। এটা এর অন্যতম একটা বৈশিষ্ট্য।

একাধিক ডিভাইসে ব্যবহারযোগ্যঃ ক্লাউড কম্পিউটিং এর সেবা যেমন ক্লাউড স্টোরেজ সহ অনেক সেবা একাধিক ডিভাইসে ব্যবহার করতে পারবে। আপনার অ্যাকাউন্টের ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করে অন্যকোনো ডিভাইসে লগিন করেও আপনি একই সেবা কয়েকটা ডিভাইসে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন।

অধিক নিরাপদঃ ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকের ডেটা সংরক্ষণে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। তাদের সিকিউরিটি বিষয়ক একটা দল সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করে থাকে। তাই এক্ষেত্রে আপনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পাচ্ছেন।

অ্যাক্সেসেবলঃ আপনি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাউড কম্পিউটিং এর সার্ভিসগুলো নিতে পারবেন। আপনি কোথায় অবস্থান করছেন সেটা মুখ্য বিষয় না, আপনি মূলত ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকলেই সেটা অ্যাক্সেস করতে পারবেন।

এছাড়াও ক্লাউড কম্পিউটিং এর অনেক অনেক সুবিধা রয়েছে যেগুলো আপনার অনুধাবন করতে পারবেন যদি এই পরিষেবা গ্রহণ করে থাকেন।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর প্রকারভেদ

মডেল অনুসারে প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা আছে। ক্লাউডের অবস্থান অনুযায়ী ক্লাউড কম্পিউটিংকে মূলত ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হচ্ছে

  1. পাবলিক ক্লাউড (Public Cloud)
  2. প্রাইভেট ক্লাউড (Private Cloud)
  3. ক্লাউড (Hybrid Cloud)
  4. কমিউনিটি ক্লাউড (Community Cloud)

পাবলিক ক্লাউডঃ পাবলিক কথাটির দ্বারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এটা একটা উন্মুক্ত ব্যবস্থা। পাবলিক ক্লাউড হলো এমন একধরনের ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবস্থা যেটা সকলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত থাকে। যে অর্থ প্রদান করবে সেই সেবা নিতে পারবে এমন ক্লাউড ব্যবস্থাকে মূলত পাবলিক ক্লাউড কম্পিউটিং বলে। এখানে যেহেতু একাধিক ব্যবহারকারী একই ক্লাউড থেকে সেবা গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়ে কিছুটা দ্বিধা থেকেই যায়। পাবলিক ক্লাউডের উদাহরণ হলো Google Drive, Amazon EC2 ইত্যাদি।

প্রাইভেট ক্লাউডঃ একটি নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের একাধিক সেবা যখন একটি ক্লাউড ব্যবস্থা ব্যবহার করে পরিচালনা করা হয় তখন তাকে প্রাইভেট ক্লাউড বলে। সহজভাবে বলতে গেলে, ধরুন কোন একটা কোম্পানির ৫টি বিভাগ আছে। প্রতিটা বিভাগের অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করতে আলাদা আলাদা ডেটা সেন্টার তৈরি করার পরিবর্তে একটি বড় ডেটা সেন্টার স্থাপন করে সেখান থেকে ৫টি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে তাকে প্রাইভেট ক্লাউড বলে। প্রাইভেট ক্লাউড ব্যবস্থায় খরচ তুলনামূলক বেশি হয় এবং এটি শুধুমাত্র একক কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা ব্যবহার করে থাকে। যেহেতু ব্যবহারকারী হিসেবে এখানে আলাদা আলাদা কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা থাকে না সেহেতু এই ক্লাউড ব্যবস্থায় নিরাপত্তা বেশ জোরদার করা থাকে।

হাইব্রিড ক্লাউডঃ হাইব্রিড ক্লাউড হলো মূলত পাবলিক ও প্রাইভেট ক্লাউডের সংমিশ্রণ। অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল কাজগুলো করা হয় প্রাইভেট ক্লাউড ব্যবহার করে আর তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করা হয় পাবলিক ক্লাউড ব্যবহার করে। উদাহরণসরূপ বলা যায়- কোনো একটা কোম্পানি তার কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগের জন্য পাবলিক ক্লাউড এবং কাস্টমারদের ডেটা স্টোর করার জন্য প্রাইভেট ক্লাউড ব্যবহার করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী? অ্যাফিলিয়েট করে আয়

কমিউনিটি ক্লাউডঃ নির্দিষ্ট কোন কমিউনিটি বা ক্লাসের মানুষের জন্য যে ক্লাউড সিস্টেম ব্যবহার করা হয় তাকে কমিউনিটি ক্লাউড বলে। পাবলিক ক্লাউডের মতো এখানেও একধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যুক্ত থাকে। কিন্তু পাবলিক ক্লাউডের সাথে কমিউনিটি ক্লাউডের সামান্য পার্থক্য আছে আর সেটা হলো পাবলিক ক্লাউড যেকোনো শ্রেণীর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারে কিন্তু কমিউনিটি ক্লাউড শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শ্রেণীর ব্যক্তিদের জন্যই উন্মুক্ত থাকে।

মনে করুন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকদের ক্লাউড কম্পিউটিং সুবিধা দেয়ার জন্য একটা ক্লাউড সিস্টেম তৈরি করা হলো। এখানে যদি শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকদের অ্যাক্সেস থাকে, আর কেউ ব্যবহার করতে না পারে তাহলে এটাকে কমিউনিটি ক্লাউড বলা হয়।

সেবা অনুসারে প্রকারভেদ

সার্ভিস মডেল অনুযায়ী ক্লাউড কম্পিউটিং ৪ প্রকারঃ

  1. অবকাঠামোগত সেবা (IAAS – Infrastructure As A Service)
  2. প্ল্যাটফর্মভিত্তিক সেবা (PAAS-  Platform As A Service)
  3. সফটওয়্যার সেবা (SAAS)

অবকাঠামোগত সেবাঃ এটা এমন একধরনের ক্লাউড সেবা যেখানে একটা সম্পূর্ণ অবকাঠামো বা যন্ত্র ভাড়া দেয়া হয়। ধরুন, আপনার একটি কম্পিউটার আছে কিন্তু সেটা ততটা ক্ষমতাসম্পূর্ণ না যতটা আপনার কাজ করতে প্রয়োজন। এখন আপনি চাইলে ইন্টারনেটে সম্পূর্ণ একটা কম্পিউটার ভাড়া নিতে পারবেন, যেটার হার্ডওয়্যারগুলো আপনি চোখে দেখতে পারবেন না কিন্তু সেটার সকল ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন।

অ্যামাজনের EC2 এইধরনের একটা অবকাঠামোগত বা Infrastructural Service। এখানে আপনি অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা থেকে কম্পিউটারের সকল কাজ করতে পারবেন অতিরিক্ত কোনো হার্ডওয়্যার ব্যবহার ছাড়াই।

প্ল্যাটফর্মভিত্তিক সেবাঃ এক্ষেত্রে ক্লাউড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীদেরকে শুধুমাত্র কোনো প্ল্যাটফর্ম ভাড়া দিয়ে থাকে। একটি কম্পিউটারে সম্পূর্ণ ফিচার আপনাকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পরিবর্তে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ফিচার ভাড়া দেয়।

মনে করুন, আপনি একজন প্রোগ্রাম। আপনি যদি ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা ভাড়া নিতে চান সেক্ষেত্রে সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি আপনাকে প্রোগ্রামিং করার একটা পরিবেশ ভাড়া দিবে, সেখানে আপনি প্রোগ্রামিং করার প্রয়োজনীয় টুলস পেয়ে যাবেন এবং অতিরিক্ত কিছু যুক্ত করতেও পারবেন।

সফটওয়্যার সেবাঃ ক্লাউড সফটওয়্যার সেবা হলো এমন একধরণের ভার্চুয়াল সেবা যেখানে আপনি নির্দিষ্ট একটা সফটওয়্যার ও এর সকল প্রয়োজনীয় টুলস ভাড়া নিতে পারেন। গুগলের Docs, Sheet ইত্যাদি হচ্ছে ক্লাউড সফটওয়্যার সেবার উদাহরণ।

ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি

সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কোম্পানি হলোঃ

  • গুগল ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম (Google Cloud Platform)
  • আইবিএম (IBM)
  • অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস (Amazon Web Services)
  • মাইক্রোসফট অ্যাজিউর (Microsoft Azure)
  • সেলস ফোর্স (SalesForce)
  • ডিজিটাল ওশ্যান (Digital Ocean)
  • ড্রপ বক্স (DropBox)
  • ডেল টেকনোলজিস (Dell Technologies)

এছাড়াও আরো অনেক ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি আছে বিশ্বজুড়ে, সেগুলো তেমন জনপ্রিয় না হওয়ায় এখানে উল্লেখ করিনি।

আরও পড়ুনঃ ব্লগার ওয়েবসাইটে বাংলা ফন্ট যুক্ত করার নিয়ম [Best Method]

এই ছিলো ক্লাউড কম্পিউটিং কি, ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আশা করি পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি এর বাইরে কোন বিষয়ে জানতে চান বা কোন বিষয়ে আর্টিকেল চান তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Trick Bongo Google news
Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *